গ্নু ইশতেহার

গ্নু ইশতেহার1 রিচার্ড স্টলম্যান লিখেছিলেন ১৯৮৫ সালের দিকে, গ্নু অপারেটিং সিস্টেম নির্মাণে সাহায্য চাইতে। এই লেখার কিছু অংশ ১৯৮৩ সালের মূল ঘোষণা থেকে নেওয়া। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ছোটখাট সম্পাদনা করা হয়েছে, তারপর এটিকে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেইসময় থেকেই, আমরা লক্ষ্য করি সঠিক শব্দের ব্যবহার কিছু সাধারণ ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে পারে। সেসবক্ষেত্রে ১৯৯৩ সাল থেকে পাদটীকা যুক্ত করা হচ্ছে।

আপনি যদি গ্নু/লিনাক্স সিস্টেম ইন্সটল করতে চান, আমাদের মতে শতভাগ মুক্ত গ্নু/লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার শ্রেয়। আর সাহায্য করতে এখানে দেখুন: http://www.gnu.org/distros

গ্নু প্রকল্প মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের2 একটি অংশ। গ্নু-কে “ওপেন সোর্স” এর সাথে সম্পৃক্ত করা ভ্রান্তিজনক, ১৯৯৮ সাল থেকে যারা মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের নীতির সাথে একমত নন তারা “ওপেন সোর্স” শব্দটি দিয়ে একইক্ষেত্রের নীতিবিবর্জিত পদ্ধতির কথা বলে।

গ্নু কী? গ্নু নয় ইউনিক্স!

গ্নু, যার অর্থ গ্নু নয় ইউনিক্স3, একটি পুর্ণাঙ্গ ইউনিক্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সফটওয়্যার সিস্টেম যা আমি লিখছি4 যেন আমি আগ্রহী সবাইকে বিনামূল্যে দিতে পারি5। আরো কিছু স্বেচ্ছাসেবী আমাকে সাহায্য করছেন। সাহায্য হিসেবে সময়, অর্থ, প্রোগ্রাম এবং যন্ত্রপাতি খুবই প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত আমরা তৈরী করেছি ইম্যাকস্ টেক্সট এডিটর যার জন্য লিস্পের সাহায্যে কমান্ড লেখা যাবে, একটি সোর্সকোডের পর্যায়ের ডিবাগার, একটি yacc এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পার্সার জেনেরেটর, একটি লিঙ্কার এবং গোটা পঁয়ত্রিশ ইউটিলিটি। একটি শেল (কমান্ড ইন্টারপ্রেটার) তৈরীর শেষের পথে। একটি বহনযোগ্য অপটিমাইজিং সি কম্পাইলার নিজেকে কম্পাইল করতে পেরেছে এবং আশা করা যায় এবছর মুক্তি পাচ্ছে। একটি প্রাথমিক কার্নেল তৈরী হয়ে আছে কিন্তু আরো বৈশিষ্ট্য যোগ করতে হবে ইউনিক্সের স্বাদ দিতে। কার্নেল এবং কম্পাইলার তৈরী হলে প্রোগ্রাম তৈরীর উপযোগী গ্নু সিস্টেম আমরা বিতরণ করতে পারবো। আমরা টেক্সট ফরম্যাটার হিসেবে টেক্স(TeX) ব্যবহার করবো, কিন্তু একটি nroff6 এর ওপর কাজ চলছে। আমরা মুক্ত ও বহনযোগ্য এক্স উইন্ডো সিস্টেমও ব্যবহার করবো। এরপর আমরা বহনযোগ্য কমন লিস্প, একটি এম্পায়ার গেম, একটি স্প্রেডশীট প্রোগ্রাম এবং আরো শত শত জিনিস এবং একটি অনলাইন ডকুমেন্টেশন তৈরী করবো। আমরা আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় সবকিছুই যা একটা ইউনিক্স সিস্টেম থাকে তা দিতে পারবো, এবং আরো অনেককিছু।

গ্নুতে ইউনিক্স প্রোগ্রাম চলবে, কিন্তু আমরা সবকিছুতেই ইউনিক্সের মত হতে চাইনা। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সবরকম উন্নয়ন করবো। বিশেষ করে আমাদের পরিকল্পনা আছে আরো বড় ফাইলের নামের ব্যবস্থা, ফাইলের ভার্শন নাম্বার, একটি ফাইল সিস্টেম যা ক্র্যাশ করবে না, সম্ভব হলে ফাইলের নামের কম্প্লিশন, টার্মিনাল থেকে স্বাধীন ডিস্প্লে ব্যবস্থা এবং সম্ভব হলে একটি লিস্পে তৈরী উইন্ডো সিস্টেম যোগ করা যার মাধ্যমে একাধিক লিস্প-ভিত্তিক ও সাধারণ ইউনিক্স প্রোগ্রাম একই স্ক্রীনে কাজ করতে পারবে। সি এবং লিস্প দুটো ভাষাতেই সিস্টেম প্রোগ্রামিং করা যাবে। আমরা UUCP, MIT Chaosnet এবং Internet এর সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করবো যোগাযোগের জন্য।

গ্নু প্রাথমিক ভাবে 68000/16000 ক্লাসের ভার্চুয়াল মেমরিওয়ালা মেশিনগুলোকে চিন্তা করে বানানো হয়েছে কারণ এগুলোতে চালানো সবচেয়ে সহজ। আরো ছোট মেশিনে চালানোর জন্য পরিশ্রম তাদের করতে হবে যারা চালাতে চান।

বিভ্রান্তি এড়াতে “গ্নু” উচ্চারণের সময় জি এর উচ্চারণ করুন।

কেন আমি গ্নু লিখছি

আমি মনে করি মূল নিয়মটা হওয়া উচিত যে আমি যদি একটি প্রোগ্রাম পছন্দ করি, আমি অন্যদের সাথে সেটা শেয়ার করতে পারবো। সফটওয়্যার বিক্রেতারা ব্যবহারকারীদের শেয়ার না করায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়ে একা করে তাদের জিম্মি করতে চায়। আমি অন্য ইউজারদের সাথে আমার একাত্মতা এভাবে ভাঙতে পারবো না। আমার মাথা ঠিক থাকতে আমি কখনো ননডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট বা সফটওয়্যার লাইসেন্স এগ্রিমেন্টে সই করতে পারবো না। দীর্ঘদিন আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারে এমন ঘটনা ঘটতে দিইনি কিন্তু এখন তারা অনেকদূর পৌঁছে গেছে। আমি এমন প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারিনা যেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন কাজে বাধ্য করা হয়।

তাই, যেন অসম্মানের সাথে কম্পিউটার ব্যবহার করতে না হয় সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যথেষ্ট পরিমানে সফটওয়্যার তৈরী করার যেন মুক্ত সফটওয়্যার না হলেও আমার চলে। আমি এআই গবেষণাগার থেকে পদত্যাগ করেছি যেন এমআইটি গ্নু বিতরণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিতে পারে।7

কেন গ্নু ইউনিক্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে

ইউনিক্স আমার মতে আদর্শ সিস্টেম না, কিন্তু খুব একটা খারাপও না। ইউনিক্সের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো, এবং আমি মনে করি আমি সেগুলো নষ্ট না করেই যেখানে কমতি আছে সেখানে ঠিক করতে পারবো। তাছাড়া ইউনিক্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বললে অনেক মানুষের কাছে ব্যবহারযোগ্যতা বাড়বে।

গ্নু যেভাবে পাওয়া যাবে

গ্নু পাবলিক ডোমেইনে নেই। ফলে সবাই গ্নু পরবির্ধন ও পুণঃবিতরণে করতে পারবে কিন্তু কোনো বিতরণকারীই পুণঃবিতরণে বাধা দিতে পারবে না। অর্থাৎ প্রোপ্রিয়েটারি পরিবর্ধন করা যাবে না। আমি নিশ্চিত করতে চাই গ্নু এর সকল ভার্শন মুক্ত হবে।

কেন আরো অনেক প্রোগ্রামার সাহায্য করতে আগ্রহী

আমি আরো অনেক আগ্রহী প্রোগ্রামার পেয়েছি যারা স্বানন্দ্যে গ্নু-কে সাহায্য করতে চায়।

অনেক প্রোগ্রামারই ব্যবসায়িক সিস্টেম সফটওয়্যারের ব্যাপারে অসুখী। এতে হয়ত তারা আরো টাকা আয় করতে পারবে কিন্তু এর মাধ্যমে তারা অন্যান্য প্রোগ্রামারদের সাথে বন্ধুত্বের বদলে বৈরী অনুভব করে। প্রোগ্রামারদের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি সাধারণ ব্যাপার হলো প্রোগ্রাম শেয়ার করা। ব্যবসায়িক নিয়মকানুনগুলো এখন ব্যবহারকারীদের অন্যদের বন্ধু ভাবা থেকে বিরত রাখে। প্রোগ্রামপের ক্রেতাকে তাই আইনের প্রতি আনুগত্য এবং বন্ধুত্বের মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই, অনেকেই মনে করেন বন্ধুত্ব বেশি জরুরি। কিন্তু যারা আইনে বিশ্বাস রাখেন তারা সহজে এই দুয়ের ভেতর বেছে নিতে পারেন না। তারা ঘৃণাভরে মনে করেন প্রোগ্রামিং শুধু টাকা আয়েরই পথ।

কাজের মাধ্যমে ও ব্যবসায়িক প্রোগ্রামের বদলে গ্নু ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আইনের পরিসরেই সবার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারি। তাছাড়াও, গ্নু একটা উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে অন্যদের জন্য যেন তারাও শেয়ার করতে আগ্রহী হয়। এর মাধ্যমে আমরা একধরণের ঐকতানের স্বাদ পেতে পারি যা মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারব্যতীত সম্ভব না। আমার সাথে কথা হয়েছে এমন প্রোগ্রামারদের অর্ধেকই মনে করেন এই আনন্দের সাথে টাকা বিনিময়যোগ্য না।

আপনি যেভাবে সাহায্য করতে পারেন

(এখনকার দিনে, সফটওয়্যার নির্মাণে সাহায্য করতে চাইলে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্টের তালিকা এবং গ্নু সাহায্য প্রয়োজনীয় তালিকা এবং গ্নু সফটওয়্যার প্যাকেজের সাধারণ কার্যাবলী দেখুন। সাহায্যের অন্যান্য উপায়ের জন্য গ্নু অপারেটিং সিস্টেমে সাহায্যপ্রণালী দেখুন।)

আমি কম্পিউটার নির্মাতাদের কাছে যন্ত্রপাতি ও অর্থ সাহায্য চাইছি। আমি একক ব্যক্তির কাছে প্রোগ্রাম ও শ্রম চাইছি সাহায্য হিসেবে।

যন্ত্রপাতি দেওয়ার মাধ্যমে আপনি আশা করতে পারেন সেসব যন্ত্রে গ্নু আগে চলবে। যন্ত্রটি হতে হবে সম্পূর্ণ ও সিস্টেমের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং আবাসিক এলাকায় ব্যবহারযোগ্য এবং খুব বেশি ঠান্ডা করার ব্যবস্থা বা বৈদ্যুতিক শক্তি লাগবেনা এমন।

আমি প্রচুর প্রোগ্রামার পেয়েছি যারা খণ্ডকালীন কাজের মাধ্যমে গ্নু-তে অবদান রাখতে চান। অধিকাংশ প্রকল্পে এমন খণ্ডকালীন এবং বণ্টন করা কাজ পরিচালনা করা কঠিন; আলাদা আলাদা করে লেখা অংশগুলো একসাথে কাজ করেনা সহজে। কিন্তু আমাদের ইউনিক্সের বিকল্প তৈরীর কাজে এই সমস্যা অনুপস্থিত। একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিক্স সিস্টেম শত শত ইউটিলিটি প্রোগ্রাম নিয়ে গঠিত হয় যাদের আলাদা আলাদা ডকুমেন্টেশন করা হয়। বেশিরভাগ ইন্টারফেসের স্পেসিফিকেশন ইউনিক্সের সাথে ঠিক করে দেওয়া থাকে। কোনো সাহায্যকারী যদি একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রোগ্রাম লিখতে পারে যেটি মূল প্রোগ্রামের জায়গায় ইউনিক্স সিস্টেমে ঠিকঠাক কাজ করে তবে সেটি আর সব প্রোগ্রামের সাথেও এক করলে ঠিকমত কাজ করবে। এমনকি এভাবে করেও কিছু সমস্যা তৈরী হলে তার সমাধান সাধ্যাতীত হবে না। (কার্নেল8 এর জন্য আরো নিবিড় যোগাযোগের প্রয়োজন পড়বে এবং একটি ছোট ও সংহত দল এই কাজটি হাতে নেবে।)

যদি অর্থসাহায্য পাই তবে পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন সময়ের জন্য কিছু মানুষ নিয়োগ দিতে পারবো। একজন প্রোগ্রামার এর সাপেক্ষে বেতন খুব একটা বেশি হবে না, কিন্তু আমি তেমন মানুষ খুঁজছি যারা টাকা আয়ের চেয়ে গোষ্ঠীচেতনা তৈরী করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমার মতে এইভাবে নিবেদিত মানুষের পূর্ণশক্তিতে গ্নু-র কাজ করতে পারবে, গ্রাসাচ্ছদনের জন্য অন্যপথ দেখতে হবে না।

কেন সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারী উপকৃত হবে

যখন গ্নু তৈরী হয়ে যাবে, সবাই ভালোমানের সিস্টেম সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাবে, বাতাসের মতই।9

এর গুরুত্ব আরো ব্যাপক, শুধুমাত্র ইউনিক্স লাইসেন্সের খরচ বাঁচানোয় সীমাবদ্ধ না। এর অর্থ সিস্টেম প্রোগ্রামের অপ্রয়োজনীয় পুনঃনির্মাণ এড়ানো। বরং সেই শ্রমে প্রোগ্রামকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করা যেতে পারে।

কম্পিউটার সিস্টেমের সোর্স সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। ফলস্বরূপ, একজন ব্যবহারকারী যার সিস্টেমে কোনোরকমের পরিবর্তন প্রয়োজন হবে সে নিজেই তা করতে পারবে অথবা তার পছন্দমত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে পারবে তা করার জন্য। ব্যবহারকারী আর একজন প্রোগ্রামার বা প্রতিষ্ঠানের জিম্মি থাকবে না যে একাই পরিবর্তনটি করতে পারত।

স্কুলগুলো আরো ভালো শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে তার শিক্ষার্থীদের সিস্টেম প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানা ও উন্নয়ন করতে আগ্রহী করে। হার্ভার্ডের কম্পিউটার গবেষণাগারের নিয়ম ছিল তাদের সিস্টেমে এমন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করা যাবে না যার সোর্স সবাই দেখতে পাবে না। এমনকি কিছু প্রোগ্রাম তারা এভাবে বাতিল করার মাধ্যমে নিয়মটি চালু রেখেছিল। আমি এটায় খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি একসময়।

সবশেষে কে সিস্টেম সফটওয়্যারের মালিক আর কেইবা কী করতে পারবে সে বিষয়ে সকল মাথাব্যথার অবসান হবে।

যে ব্যবস্থায় মানুষকে সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য মূল্য পরিশোধে বাধ্য করা হয়, একজন কোন প্রোগ্রাম কিনবে এবং. কত দামে তা ঠিক করতে সমাজের নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। এবং এই নিয়মকানুন জোরপূর্বকছাড়া মানানো কঠিন। একটি মহাকাশকেন্দ্র চিন্তা করুন যেখানে বাতাসের প্রচণ্ড দাম। প্রত্যেক লিটার বাতাসের জন্য দাম নেওয়া যুক্তিযুক্ত কিন্তু দিনরাত একটা মিটার লাগানো গ্যাস মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানোও অসম্ভব, সবাই দাম দিতে পারলেও। আর মনে করুন সবজায়গায় টিভি ক্যামেরা লাগানো যেন সর্বদা দেখতে পারে আপনি কখনো মুখ থেকে মাস্ক খুলছেন কিনা। এরচেয়ে মাস্ক ফেলে দিয়ে মাথাপিছু কর নিয়ে বাতাসের প্ল্যান্ট চালানো ভালো।

একটি প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের অংশবিশেষ পুনঃব্যবহার একজন প্রোগ্রামারের কাছে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতই স্বাভাবিক। এটা মুক্তই থাকা উচিত।

গ্নু-র উদ্দেশ্যের বিপক্ষে সাধারণ কিছু অভিযোগের উত্তর

কেউ বিনামূল্যে এমন সফটওয়্যার নেবে না। কেননা এতে সাহায্য পাওয়ার সম্ভবনা নাই।

সাহায্য করার জন্য হলেও প্রোগ্রামের দাম নিতে হবে।

যদি মানুষ বিক্রয়োত্তর সেবা ও গ্নু সিস্টেমের জন্য টাকা দিতে সেবাহীন কিন্তু বিনামূল্যে পাওয়া গ্নু-র চেয়ে বেশি পছন্দ করে তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ফ্রী গ্নু ব্যবহারকারীদের শুধু সেবা প্রদান করে তবে তারা লাভবান হবে।10

আমাদের সত্যিকারের প্রোগ্রামিং সেবা ও হাতে ধরে পথ দেখানোর মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে৷ প্রথমটির জন্য সফটওয়্যার বিক্রেতার উপর মোটেও নির্ভর করা যায় না। সমস্যা আপনার একার হলে বিক্রেতার থেকে কোনো সাহায্য পাওয়াই কঠিন হবে৷

যদি আপনার কাজের জন্য বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য নির্ভর করতে হয় সেটা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সব সোর্স এবং টুলস নিজের অধিকারে থাকা। তারপর আপনি যেকোনো মানুষকে আপনার সমস্যা সমাধান নিয়োগ দিতে পারেন; আপনার কারো কাছে জিম্মি হতে হবে না। ইউনিক্সের ক্ষেত্রে, সোর্সের উচ্চমূল্য অধিকাংশক্ষেত্রে এমনটা করতে বিরত করবে। এরপরেও যোগ্য মানুষ নাও পেতে পারেন তবে তারজন্যে গ্নু-কে দোষ দেওয়া অন্যায়। গ্নু এই পৃথিবীর সব সমস্যার নয়, কিছু কিছু সমস্যার সমাধান।

অন্য দিকে, যে ব্যবহারকারী কম্পিউটারের ব্যাপারে কিছুই জানেনা তাকে হাতে ধরে কাজ করিয়ে দিতে হবে। এমন সব কাজ যা তারা সহজেই করতে পারত কিন্তু জানে না কীভাবে করবে।

এধরনের সেবাও কিছু প্রতিষ্ঠান দিতে পারে যারা শুধু প্রশিক্ষণ ও মেরামতের কাজ করে থাকে। যদি এটাই সত্যি হয় যে ব্যবহারকারী তারপরেও টাকা খরচ করতে চায় সেবাসহ পণ্য কিনতে, তাহলে তারা সেবা কিনতেও পছন্দ করবে যেখানে পণ্যটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম ও সেবার মানের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। ব্যবহারকারী কোনো একজনের কাছে জিম্মি থাকবে না। ইতমধ্যে, যাদের সেবার প্রয়োজন নেই তারা খরচ না করেই প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন ছাড়া বেশিদূর এগোনো যাবেনা, আর এর ব্যয়বহনের জন্যও তো টাকা নিতে হবে।

এমন প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন করে লাভ নাই যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

বিনামূল্যে বা খুব স্বস্তায় গনসংযোগের অনেক উপায় আছে যার মাধ্যে এমন সব মানুষকে জানানো যায় যারা গ্নু পছন্দ করবে। কিন্তু এটা হয়ত সত্যি মাইক্রোকম্পিউটার ইউজারদের কাছে আরো বেশি পৌঁছানো যায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। যদি তাই হয়, একটি প্রতিষ্ঠান যারা গ্নু কপি ও মেইল করার সেবা দেয় অর্থের বিনিময়ে তারা বিজ্ঞাপনও দিতে পারবে। এভাবে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীরাই বিজ্ঞাপন দ্বারা উপকৃত হবে।

অন্যদিকে, যদি অনেক মানুষ বন্ধুবান্ধব থেকে গ্নু পায়, এবং এমন প্রতিষ্ঠান না থাকে, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় বিজ্ঞাপনের খুব একটা প্রয়োজন নেই গ্নুর প্রসারের জন্য। মুক্ত বাজারের হর্তাকর্তারা কেন মুক্ত বাজারকেই তার ভাগ্য নির্ণয় করতে দিচ্ছেন না?11

আমার কোম্পানির একটি প্রোপ্রিয়েটরি অপারেটিং সিস্টেম দরকার প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে

গ্নু অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারকে প্রতিযোগীতার জায়গা থেকেই সরিয়ে দেবে। আপনি অপারেটিং সিস্টেমের জোরে আপনার প্রতিযোগীর উপরে উঠতে পারবেন না, আপনার প্রতিযোগীও পারবে না। আপনাদের প্রতিযোগীতা হবে অন্যন্য ক্ষেত্রে আর এইক্ষেত্রে আপনাদের সুযোগ হবে সমান-সমান। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি অপারেটিং সিস্টেমই বিপণন করে তো গ্নু আপনার পছন্দ হবে না, কেননা গ্নু আপনার জন্য ক্ষতিকর। আপনার ব্যবসা যদি অন্যকিছুর হয় তবে গ্নু আপনাকে উচ্চমূল্যে অপারেটিং সিস্টেম কেনা থেকে বাঁচাবে।

আমি চাই গ্নু অনেক মানুষের সাহায্যে তৈরী হোক, তাতে সবারই খরচ কমবে।12

প্রোগ্রামারদের কি তাদের সৃজনশীলতার মূল্য দেওয়া প্রয়োজনীয় না?

যদি কোনোকিছু মূল্য পাওয়ার যোগ্য হয় তা হচ্ছে সামাজিক অবদান। সৃজনশীলতা সামাজিক অবদান হিসেবে আসতে পারে, ততক্ষণই যতক্ষণ সমাজ তার ফলাফল মুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারছে। যদি একজন প্রোগ্রামার তার সৃষ্টিশীলতার জন্য পুরষ্কৃত হতে পারে, একইভাবে সেই প্রোগ্রামের মুক্তিহীনতার জন্য শাস্তিও পাওয়ারও যোগ্য সে।

একজন প্রোগ্রামার কি তার সৃজনশীলতার দামও চাইতে পারবে না?

পরিশ্রমের জন্য মূল্য চাওয়া বা নিজের আয় বাড়ানোর মধ্যে অন্যায় কিছুই নেই যতক্ষণ না পর্যন্ত তা ধ্বংসাত্মক কিছু হয়ে উঠছে। কিন্তু আজকাল সফটওয়্যার জগতে এটি ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে টাকা আয় করা ধ্বংসাত্মক কেননা এর মাধ্যমে সফটওয়্যার ব্যবহারের পথ ও পদ্ধতি কমে যায়। এর মাধ্যমে প্রোগ্রামটির থেকে মানবসমাজ যে উপযোগ পেতে পারত তা কমে যায়। যখন বিধিনিষেধ ইচ্ছাকৃত, তখন তার খারাপ ফল আসতে পারে ইচ্ছাকৃত ধ্বংসপ্রক্রিয়া।

একজন সুনাগরিক আরো ধনী হতে ধ্বংসাত্মক পথ অবলম্বন করেন না, কেননা সবাই এমন করলে আমাদের সমষ্টিগত ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের সবাইকে আরো দরিদ্র হয়ে উঠত। এটাকে বলে কান্টীয় নৈতিকতা; অথবা, সুবর্ণ নিয়ম। যেহেতু আমি এমন অবস্থা পছন্দ করবো না যার ফলাফল হিসেবে সবাই তথ্য গোপন করতে শিখবে, আমার কাছ সবাই এর জায়গায় তাই একজন এমন করলেও তা অন্যায়। বিশেষতঃ সারা পৃথিবীকে বঞ্চিত করে সৃজনশীলতার জন্য মূল্য পাওয়ার ইচ্ছাকে ন্যায় বলা যায় না।

প্রোগ্রামাররা না খেয়ে মরবে না?

এক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, কাউকে জোর করা হয় না প্রোগ্রামার হতে। আমাদের অধিকাংশই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে একটি টাকাও আয় করতে পারিনা। সে চেষ্টাও কেউ করে না। মানুষ অন্যকিছু করে।

কিন্তু এটা ভুল উত্তর। এটা প্রশ্নকর্তার এই ধারণাই দৃঢ় করে যে, সফটওয়্যারের মালিকানা ছাড়া প্রোগ্রামার একটি পয়সাও পেতে পারেনা। হয় সবকিছু, নয় কিছুই না।

প্রোগ্রামাররা না খেয়ে মরবে না তার আসল কারন হচ্ছে এই ব্যবস্থায়ও তাদের আয়ের সুযোগ আছে, শুধু আগের থেকে কম।

কপি করা বন্ধ করাই সফটওয়্যার ব্যবসার একমাত্র ভিত্তি না। এটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভিত্তি13 কেননা এটা সবচেয়ে বেশি টাকা আয়ের সুযোগ করে দেয়। যদি এটা নিষিদ্ধ করা হয় বা ক্রেতারা এটিকে প্রত্যাখ্যান করে, প্রতিষ্ঠানগুলো সফটওয়্যার ব্যবসার অন্যান্য পথ খুঁজবে যেগুলো কম ব্যবহৃত হয়। একটা ব্যবসা গড়ে তোলার বিভিন্ন পন্থা সবসময়ই থাকে।

সম্ভবত প্রোগ্রামিং এইসব নতুন ব্যবস্থায় এখনকার মত লাভজনক হবে না। কিন্তু পরিবর্তনের মূল জায়গাটা এখানে না। এটা ধরেই নেওয়া হয় বর্তমানে কেরানীর বেতন যথাযথভাবে কম। প্রোগ্রামারও তেমন আয় করলেও তা অন্যায় হবে না। (ব্যবহারিকভাবে প্রোগ্রামার অবশ্যই তারচেয়ে অনেক বেশি আয় করবেন।)

মানুষের সৃজনশীলতা কীভাবে ব্যবহার হবে তা কি তার নিয়ন্ত্রনের অধিকার নেই?

“নিজের সৃজনশীলতার উপর নিয়ন্ত্রণ” আসলে অন্যমানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণকেই বিধিবদ্ধ করে; আর অন্যদের জীবন কঠিন করে তোলাই তার কাজ।

যারা মেধাস্বত্ত্ব আইন14 সতর্কতার সাথে পড়েছেন(যেমন আইনজীবিরা), তারা বলেন স্বাভাবিকভাবে মেধাস্বত্ত্ব বলে কিছু হয়না। মেধাস্বত্ত্ব আইনগুলো বিশেষ কাজে বিশেষ সময় তৈরী হয়।

উদাহরণস্বরূপ, পেটেন্ট পদ্ধতি তৈরী করা হয়েছিল আবিষ্কর্তাদের তাদের আবিষ্কারের খুঁটিনাটি জনসমক্ষে তুলে ধরতে। আবিষ্কর্তা নয় বরং সমাজের সুবিধার দিকে তাকিয়েই এটা করা হয়েছিল। একটা সময়, ১৭বছরের পেটেন্ট কমই মনে হত যখন শিল্পের পর্যায়ে যেতে লাগলো আবিষ্কারগুলো। যেহেতু পেটেন্টের ব্যাপারটা উৎপাদকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যাদের কাছে লাইসেন্সের খরচ উৎপাদনের তুলনায় সামান্যই, পেটেন্ট খুব বেশি ক্ষতির কারন হয় না। তারা গণমানুষের ক্ষতির কারন হয় না যারা পেটেন্ট করা পণ্য ব্যবহার করছে।

কপিরাইটের ধারণা প্রাচীনকালে ছিল না, তখন লেখকরা হরহামেশাই অন্য লেখকের লেখা ব্যবহার করত তথ্যমূলক লেখার ক্ষেত্রে। এই পদ্ধতি ভালো ছিল, এবং এভাবেই প্রচুর লেখকের লেখা এখনো পাওয়া যায় আংশিক হলেও। কপিরাইট ব্যবস্থা চালু হয় লেখকত্বকে উৎসাহিত করতে। যে ক্ষেত্রে এটি আরোপিত অর্থাৎ ছাপার বই, সেক্ষেত্রে এটা সমস্যা না কারন ছাপাখানা ছাড়া কমখরচে ছাপানো সম্ভব না, এবং অধিকাংশ মানুষের ক্ষতির কারন হয় না যারা বইটি পড়ছে।

সকল মেধাস্বত্ত্ব অধিকার কিছু লাইসেন্সমাত্র যা সমাজ দেয়, তা ঠিক বা ভুল যেভাবেই মনে করুক, সমাজের উপকার হবে ভেবে। কিন্তু যেকোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞাস্য: এমন লাইসেন্সে আসলেই সমাজের উপকার হবে? আমরা একজন মানুষকে কী করতে দিচ্ছি?

এখনকার দিনে প্রোগ্রামের ব্যাপারটা শতবছর আগের বইয়ের থেকে বেশ আলাদারকমের। প্রোগ্রাম প্রতিবেশী থেকে কপি করে নেওয়া যায়, প্রোগ্রামের সোর্স কোড ও অবজেক্ট কোড থাকে যা সম্পূর্ণ আলাদা, প্রোগ্রাম মূলত বিনোদন নয় বা পড়া হয় না বরং ব্যবহার করা হয়, এসব মিলেই প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কপিরাইট বস্তুগত ও আত্মিকভাবে সমাজের জন্য ক্ষতিকর; আইনে থাকুক বা না থাকুক, একজন মানুষের এমনকিছু করা উচিত না।

প্রতিযোগীতা ভালো জিনিস তৈরী করায়।

প্রতিযোগীতার একটা ভালো উদাহরণ হচ্ছে দৌঁড়-প্রতিযোগীতা, যেখানে বিজয়ীকে পুরষ্কৃত করার মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে জোরে দৌঁড়তে উদ্বুদ্ধ করি। পুঁজিবাদ যতক্ষণ এভাবে কাজ করে, ভালোই করে। কিন্তু পুজিবাদের পক্ষে সাফাই যারা গায় তারা যদি ভাবেন এভাবেই সবসময় চলেন তো ভুল ভাবছেন। যে দৌঁড়চ্ছে সে যদি ভুলে যায় তাকে কেন পুরষ্কার দেওয়া হবে, বরং জেতা ও পুরষ্কৃত হওয়াটাই শুধু লক্ষ্য হয়ে ওঠে, তা যেভাবেই হোক, তাহলে অন্য দৌঁড়বিদকে আক্রমণ করার কৌশলে যেতে তাদের দ্বিধা হবে না। সব দৌঁড়বিদ শেষে দৌঁড় রেখে মুষ্ঠিযুদ্ধে যোগ দেয় তো সবাই পিছিয়ে পড়বে।

প্রোপ্রিয়েটরি এবং বদ্ধ সফটওয়্যারগুলো মুষ্টিযোদ্ধা দৌঁড়বিদদের মতই। দুঃখের বিষয়, আমাদের একজনই বিচারক আছেন যার মুষ্টিযুদ্ধে আপত্তি নেই; সে শুধু একটু সামলে রাখে (“প্রতি দশ ইয়ার্ড দৌঁড়ে একটা ঘুষি মারা যাবে”)। আসলে তার উচিত তাদের মারামারি ছাড়িয়ে দেওয়া আর মারামারি যারা করে তাদের শাস্তি দেওয়া।

অর্থ না পেলে সবাই প্রোগ্রামিং বন্ধ করে দেবে না?

আসলে, অনেক মানুষই কোনো টাকা না পেয়েই প্রোগ্রামিং করেন। কারো কারো জন্য প্রোগ্রামিং একটা অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ, বিশেষ করে যারা প্রোগ্রামিংয়ে খুব ভালো। এমন পেশাদারী গায়কের অভাব নাই যাদের কোনোদিনই গান গেয়ে গ্রাসাচ্ছদনের আশা আছে।

কিন্তু আসলে এই প্রশ্নটা, যদিও অনেকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, এইক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। প্রোগ্রামিংয়ের জন্য টাকা পাওয়া বন্ধ হবে না, শুধু কমে যাবে। তাই সঠিক প্রশ্ন হচ্ছে, প্রোগ্রামাররা কি এমন কম টাকায় প্রোগ্রামিং করবে? আমার অভিজ্ঞতা বলে, করবে।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, পৃথিবীর সেরা সব প্রোগ্রামার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারে কাজ করেছেন, তারা যে টাকা অন্য যেকোনো জায়গায় আয় করতে পারতেন তারচেয়ে অনেকে কম টাকায়। তারা টাকায় পাওয়া যায়না এমন অনেককিছুতে পুরষ্কৃত হয়েছেন: সম্মান ও মর্যাদায়। এবং সৃজনশীলতাই মজার, এটা নিজেই নিজের পুরষ্কার।

তারপর তারা অধিকাংশই চলে গেছেন যখন একইরকম কাজ অনেক টাকার বিনিময়ে করার সুযোগ পেয়েছেন।

এ থেকে বোঝা যায়, বড়লোক হওয়া ছাড়া আরো অনেক কারন আছে মানুষের প্রোগ্রামিং করার; কিন্তু যদি তাকে আরো টাকা করার সুযোগ দেওয়া হয়, সে সেটা করবে এবং চাইবে। কম বেতন দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বেতনের প্রতিষ্ঠানের সাথে পেরে ওঠেনা। কিন্তু বেশি বেতনের প্রতিষ্ঠানগুলো নিষিদ্ধ হলে তাদের এই সমস্যা থাকবে না।

আমাদের প্রোগ্রামারদের প্রয়োজন। তারা যদি বলে আমরা শেয়ার করতে পারবো না, আমাদের মানতে হব।

আপনি কখনোই এমন অবস্থায় পড়বেন না যে এমন আদেশ মানতে হবে। মনে রাখবেন: প্রতিরক্ষার জন্য কোটি টাকা, কিন্তু মাথা নত করে এক পয়সাও না!

প্রোগ্রামারদের তো বাঁচাতে হবে।

অল্প পরিসরে, এটি সত্য। তবে, প্রোগ্রামারের বাঁচার আরো অনেক পন্থা আছে সফটওয়্যার বিক্রি ছাড়া। এটাই এখন প্রচলিত কেননা এভাবে প্রোগ্রামার ও ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করতে পারে, এজন্য না যে এটাই একমাত্র পথ। আপনি যদি খুঁজতে চান আরো পথ পাবেন। এখানে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি:

একজন কম্পিউটার নির্মাতা নতুন কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম পোর্ট করতে টাকা দেবেন।

শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রোগ্রামার নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

নতুনরকমের প্রোগ্রাম ফ্রীওয়্যার15 হিসেবে বিতরণ করে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অনুদান বা প্রশিক্ষণের জন্য টাকা নিতে পারেন। আমি এমনকাজে সফল মানুষ ইতমধ্যে দেখেছি।

প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবহারকারীরা গোষ্ঠী তৈরী করতে পারে এবং ব্যয় মেটাতে পারে। এমন গোষ্ঠী প্রোগ্রামিং প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য প্রোগ্রাম তৈরী করাতে পারে।

সফটওয়্যার করের মাধ্যমে সবরকমের ডেভেলপমেন্টের ব্যয়ভার বহন করা যায়, যেমন:

ধরুন যারাই কম্পিউটার কিনবে তারাই ক শতাংশ দাম সফটওয়্যার কর হিসেবে দেবে। সরকার তখন এনএসএফ এর মত প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়্যার তৈরীর কাজে খরচ করতে সেই অর্থ দেবে।

কিন্তু কোনো কম্পিউটার ক্রেতা যদি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য অনুদান দেয়, সে কিছু সুবিধা নিতে পারে। যেমন সে তার পছন্দ অনুযায়ী প্রকল্পে অনুদান করতে পারে এই আশায় যে সেটি দ্রুত হলে সে লাভবান হবে। মূল করের বাইরে যেকোনো পরিমাণে এমন অনুদান দিতে পারবে।

করের ধার্য পরিমাণ করপ্রদানকারীরা ভোটের মাধ্যমে ঠিক করতে পারে।

ফলাফল:

বৃহৎ পরিসরে। প্রোগ্রাম মুক্ত হলে পৃথিবী আগামীদিনের ঘাটতিপূরণের দিকে আরো একটু এগোবে, যেখানে কাউকেই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হবে না শুধু গ্রাসাচ্ছদনের জন্য। মানুষ তার পছন্দের কাজে, বিনোদনের কাজে মনোনিয়োগ করতে পারবে, যেমন প্রোগ্রামিং, কেননা সপ্তাহের দরকারি দশঘন্টা আইনপেশায়, পারিবারিক কাজে, বা রোবট মেরামতি বা গ্রহাণুতে খনিজ আহরণের পর কারো প্রোগ্রামিং করতে হবে না টাকার জন্য।

আমরা ইতমধ্যে মোট কাজের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে ফেলেছি, যতটা করে একটি সমাজকে উৎপাদনশীল হতে হত, কিন্তু এর সামান্যই শ্রমিকের অবসরে রূপ নিয়েছে কাজের সাথে বিভিন্ন অকাজের ভীড়ে। এর প্রধান কারন হচ্ছে আমলাতন্ত্র এবং প্রতিযোগীতার সাথে সংগ্রামে শক্তিক্ষয়। মুক্ত সফটওয়্যার সফটওয়্যারের জগতে এমন অবস্থা অনেকটাই কাটাতে পারবে। আমাদের এটাই করতে হবে যদি কম পরিশ্রমে বেশি উৎপাদনশীল হতে হয়।

  1. মূল: http://www.gnu.org/gnu/manifesto.en.html 

  2. সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা-কে প্রাধান্য দিয়ে একটি আন্দোলন। - অনুবাদক 

  3. GNU, Gnu’s Not Unix এর সংক্ষিপ্ত রূপ। মজার বিষয় হচ্ছে পূর্ণাঙ্গরূপের প্রথম শব্দটি সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ধরনের সংক্ষেপনকে বলে পৌনঃপুনিক সংক্ষেপন বা Recursive acronym। - অনুবাদক 

  4. লিখছি অর্থ তৈরী করছি, পুরো আর্টিকেলে একাধিকবার এরকম ব্যবহার আছে। কেননা সফটওয়্যার তৈরীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে প্রোগ্রামিং করা বা কোড লেখা। - অনুবাদক 

  5. এখানে পুরো ব্যাপারটা সহজ হয়নি। উদ্দেশ্য ছিল কাউকে যেন গ্নু সিস্টেম ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য টাকা না দিতে হয়। কিন্তু অনেকেই মনে করেন বোঝানো হয়েছে যে গ্নু সিস্টেমের কপি সবসময়ই সামান্য বা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, যা কখনোই মূল অর্থ নয়। পরবর্তীতে, ইশতেহারে বলা হয়েছে কোনো প্রতিষ্ঠান সেবাপ্রদানসাপেক্ষে লাভবান হতে পারে। পরবর্তীসময়ে, আমি সতর্কতার সাথে স্বাধীনতার(Freedom) এর “free” ও বিনামূল্যের “free” এর মধ্যে পার্থক্য বলতে শুরু করি। মুক্ত সফটওয়্যার হচ্ছে সেই ধরনের সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীকে বিতরণ এবং পরিবর্তন/পরিমার্জন/পরিবর্ধন-এর সুযোগ দেয়। কেউ বিনামূল্যেই পেতে পারেন আবার কেউ মূল্যের বিনিময়ে নিয়ে সফটওয়্যারের উন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যার কাছেই সফটওয়্যারটি থাকবে তারই অধিকার আছে অন্যদের সাথে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করার। 

  6. “new roff” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ইউনিক্সের জন্য একটি টেক্সট ফরম্যাটার। - অনুবাদক 

  7. “বিনামূল্যে” শব্দটির ব্যবহার নির্দেশ করে যে তখনও আমি বিনামূল্যে ও স্বাধীনতার মধ্যের ব্যাপারগুলোতে স্বচ্ছ হইনি। আমরা এখন এধরণের কথা বলা থেকে বিরত থাকি। আরো বিস্তারিত জানতে বিভ্রান্তিজনক শব্দ ও কথা দেখুন। 

  8. কার্নেল (Kernel) এর আক্ষরিক অর্থ শ্বাস। অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণভ্রোমরা কার্নেল। প্রসেসর সকল নির্দেশনা কার্নেলের মাধ্যমেই পায়। এটি সবচেয়ে যত্ন নিয়ে তৈরী করা হয় কেননা ন্যানোসেকেন্ডের পারফর্মেন্স এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গ্নু-এর কার্নেল এখনো পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি ব্যবহারের জন্য। এটা ডেভেলপমেন্টের সময়ই স্বাধীনভাবে লিনিয়াস টরভাল্ডস্ লিনাক্স কার্নেল তৈরী করেন। পরে এটিই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ও সমাদৃত হয়। - অনুবাদক 

  9. এখানেও আমি দুই ধরণের “ফ্রী” এর মধ্যে দ্ব্যর্থনিরসনে ব্যর্থ হয়েছি। যেভাবে বাক্যটি আছে এভাবেও আসলে ভুল না। যে কেউ তার বন্ধুর থেকে বিনামূল্যে গ্নু পেতে পারে কিন্তু এটি ভুল ধারণা দেয়। 

  10. এমন কিছু প্রতিষ্ঠান এখন আছে। 

  11. যদিও এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না বরং অনুদানে চলে, ফ্রী সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তার তহবিল বিতরণ সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে। আপনিও সেবা নিতে পারেন ফাউন্ডেশনকে সাহায্য করতে। 

  12. কিছুসংখ্যক কম্পিউটার বিপণন প্রতিষ্ঠান ১৯৯১ সাল থেকে গ্নু সি কম্পাইলারের খরচ বহন করে আসছে। 

  13. আমার মনে হয় আমার বলা বলা ভুল ছিল প্রোপ্রিয়েটরি সফটওয়্যারই সফটওয়্যার ব্যবসার অন্যতম ভিত্তি। আসলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ব্যবস্থা হচ্ছে বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরী করা। এর ভেতর থেকে প্রোগ্রামকে ভাড়ায় খাটানোর সুযোগ নাই, তাই প্রতিষ্ঠানটিকে সত্যিকারের কাজ করতে হয় আয়ের জন্য। বিশেষায়িত সফটওয়্যারের ব্যবসা মোটামুটি অপরিবর্তিতরূপেই চলতে থাকবে কম-বেশি। তাই আমার মনে হয়না মুক্ত সফটওয়্যারের দুনিয়ায় আয় খুব বেশি কমবে। 

  14. আশির দশকে আমার “মেধাস্বত্ত্ব” নিয়ে কথা বলতেই খুব ঝামেলা হত। শব্দটি বড্ড একপেশে। আরো বড় কথা হচ্ছে এটার অর্থ অদ্ভুত সব আইন দিয়ে নির্ধারিত যা বিভিন্নরকমের সমস্যা সৃষ্টি করে। এখন আমি “মেধাস্বত্ত্ব” নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে বলি। তার বদলে বলি পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক এসব নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলতে। এগুলোর ব্যাপারে আরো পড়লে আপনি বিভ্রান্তির ব্যপারগুলো বুঝতে পারবেন। 

  15. সময়ের সাথে সাথে আমরা মুক্ত সফটওয়্যার ও ফ্রীওয়্যারের মধ্যে পার্থক্য করেছি। ফ্রীওয়্যার হচ্ছে সেইরকমের সফটওয়্যার যা বিনামূল্যে পাওয়া যায় কিন্তু সাধারণত সোর্সকোড দেখার সুযোগ থাকে না। আরো বিস্তারিত জানতে বিভ্রান্তিজনক শব্দ ও কথা দেখুন।